বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ফেসবুকে যেন গুজব, বিদ্বেষমূলক বক্তব্য বা ক্ষতিকর কন্টেন্ট’ ছড়িয়ে পড়তে না পারে সে লক্ষ্যে নিজেদের শক্ত অবস্থানের কথা জানিয়েছে ফেসবুকের স্বত্বাধিকারী প্রতিষ্ঠান মেটা প্ল্যাটফর্মস ইনকর্পোরেটেড।
বৃহস্পতিবার (৩ আগস্ট) মেটার কর্মকর্তারা বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন।
বৈঠক শেষে নির্বাচন কমিশনের সচিব অশোক কুমার দেবনাথ সাংবাদিকদের জানান, নির্বাচনকে সামনে রেখে অপপ্রচার বন্ধ করার বিষয়ে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে মেটা কর্মকর্তাদের হয়েছে।
তিনি জানান, নির্বাচন কেন্দ্রিক কোনো প্রচারণা নিয়ে নির্বাচন কমিশন মেটা কর্তৃপক্ষকে জানালে তারা সেটি ফেসবুক থেকে সরিয়ে নেবে বলে আশ্বাস দিয়েছে।
নির্বাচন কমিশনের এই দাবির পর স্বাভাবিকভাবেই জনমনে প্রশ্ন উঠেছে, আদৌ কি মেটা কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনের কথামতো তাদের প্ল্যাটফর্ম থেকে কোনো কন্টেন্ট সরিয়ে নেবে?
নির্বাচন কমিশনের সচিবের মন্তব্যের পরে এ বিষয়ে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম বিবিসি বাংলার পক্ষ থেকে মেটা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ই-মেইলের মাধ্যমে যোগাযোগ করে।
মুখপাত্রের বরাত দিয়ে মেইলের জবাবে প্রতিষ্ঠানটি বিবিসিকে জানায়, মেটা তাদের সব প্ল্যাটফর্মে “নির্বাচনের বিশুদ্ধতা” যেন বজায় থাকে, তা নিশ্চিত করতে নির্দিষ্ট পদ্ধতি অবলম্বন করে থাকে।
নির্বাচনের স্বকীয়তা যেন বজায় থাকে, সে লক্ষ্যে তারা সরকার, বিভিন্ন নাগরিক সংগঠন ও এনজিওগুলোর সঙ্গে “গঠনমূলক সংলাপ ও নিয়মিত যোগাযোগ” বজায় রাখে বলেও মেইলে উল্লেখ করা হয়।
মেটার “গুজব” বিদ্বেষমূলক বক্তব্য ও ক্ষতিকর কন্টেন্ট’ সম্পর্কিত বৈশ্বিক নীতিমালার অংশ এটি।
এছাড়া নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার স্বার্থে, গুজব মোকাবিলা করতে ও ক্ষতিকর কন্টেন্টের বিরুদ্ধে ফেসবুকসহ মেটার প্ল্যাটফর্মগুলোতে কী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে, সেটিও উল্লেখ করা হয় মেইলে।
যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়
মেটা জানায়, যেকোনো নির্বাচন যেন সুষ্ঠু হয়, তা নিশ্চিত করা মেটার অন্যতম উদ্দেশ্যগুলোর একটি। এর জন্য গত কয়েক বছরে কর্মীদের প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তি তৈরির পেছনে অর্থ বিনিয়োগ করেছে তারা।
বাংলাদেশের নির্বাচনকে সামনে রেখে এরই মধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কর্মরত ব্যক্তিদের প্রস্তুত করছে তারা।
প্রস্তুতির অংশ হিসেবে মেটার সঙ্গে থাকা অনলাইন নিরাপত্তা, রাজনৈতিক বিজ্ঞাপন ও কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড বিষয়ের বিশেষজ্ঞদের প্রশিক্ষণ ও প্রয়োজনীয় উপকরণ দেওয়া হয়েছে বলে বিবিসির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
এছাড়া মানুষের পাশাপাশি আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার পেছনেও বিনিয়োগ করেছে মেটাঅ। যা আগের চেয়ে দ্রুততার সঙ্গে আসন্ন হুমকি অনুমান করতে ও পদক্ষেপ নিতে সক্ষম।
মেটা বলছে, নির্বাচনকে ঘিরে ছড়ানো যেসব গুজব মানুষের ভোট প্রদানের ক্ষেত্রে ঝুঁকি তৈরি করতে পারে, সে ধরনের কন্টেন্ট তারা সরিয়ে ফেলে।
যেভাবে কন্টেন্ট অপসারণ করা হয়
গুজব ঠেকাতে সারা বিশ্বে ৯০টিরও বেশি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করে মেটা। বাংলাদেশে মেটা যেসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করে তার মধ্যে রয়েছে ফ্যাক্টওয়াচ, এএফপি ও বুম বাংলাদেশ।
গুজব ছড়ানো কন্টেন্টের পাশাপাশি যেসব অ্যাকাউন্ট থেকে গুজব ছড়ানো হয়, সেগুলোও ডিলিট করে মেটা।
এছাড়া কোনো বিষয়ে গুজব ছড়িয়ে যাওয়ার পর সেই ঘটনা সংক্রান্ত সঠিক খবর বা পোস্টের লিংক বেশি করে প্রচার করে প্রতিষ্ঠানটি।
মেটা জানায়, তাদের প্ল্যাটফর্মের নিয়মকে ফাঁকি দিয়ে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে অনেকে কন্টেন্ট তৈরি করে থাকে, যে বিষয়ে তারা ওয়াকিবহাল।
এরকম ঘটনা ঠেকাতে তারা নিয়মিত তাদের আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স সিস্টেমের উন্নয়ন করছে এবং সুশীল সমাজ, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে কাজ করছে।